আমাদের পৌরাণিক কাহিনী গুলির মধ্যে রামায়ণ বেশ জনপ্রিয়। ছোটথেকেই টিভিতে রামায়ণ দেখার পাশাপাশি বাড়ির বড়দের থেকেও আমরা রামায়ণ নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি যা আমাদের রোমাঞ্চিত করেছে অসংখ্যবার। তবে রামায়ণ কি শুধুই কাহিনী নাকি প্রাচীন যুগে সত্যিই এমন কোন ঘটনা ঘটেছিল?
এই নিয়ে বহু মানুষের বহু মত। অনেকে আছেন যারা মনে করেন রামায়ণ কেবল কাল্পনিক কাহিনী এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। তবে কেউ কেউ মনে করেন রামায়ণের ঘটনা সত্য। আজকের দুনিয়ায় এমন কিছু নিদর্শন থেকে গেছে যা থেকে রামায়ণ যে সত্যি তা প্রমাণ করা সম্ভব।
কী সেই নিদর্শন সেদিকে আসুন একবার চোখ বুলিয়ে নিই :
১) রাবণের প্রাসাদঃ- আমরা সকলেই জানি রামায়ণের লঙ্কাপতি রাবণের বাসস্থান ছিল আজকের শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কায় একটি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে যা দেখে কিছু মানুষের বিশ্বাস এটাই রাবণের প্রাসাদ যেটি হনুমান পুড়িয়ে দিয়েছিল।
২) সুগ্রীবের গুহাঃ- নানা বিচিত্র কাহিনীতে ভরপুর রামায়ণের একটি হল বানর রাজ বালি এবং সুগ্রীবের কাহিনি। দুন্দুভি নামক এক রাক্ষসকে হারিয়ে তার শরীরের খন্ডাংশ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বানর রাজ বালি। দুন্দুভির শরীরের রক্তে গিয়ে পড়েছিল মাতঙ্গ মুণির আশ্রমে। মুণি নিজের শক্তিবলে জানতে পেরে গেছিলেন এই কাজ কে করেছে এবং তারপরে তিনি বালি কে অভিশাপ দিয়েছিলেন সে যদি কোনদিন ঋষিমুখ পর্বতের আশেপাশে আসে তাহলএ তার মৃত্যু ঘটবে। এই ঘটনার কথা সুগ্রীবও জানত। তাই বালি যখন তাকে প্রতারিত করে রাজ সিংহাসন দখল করে তখন সে তার মন্ত্রীদের নিয়ে এই পাহাড়ের একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং এই স্থানেই রামচন্দ্রের সঙ্গে সুগ্রীবের আলাপ হয়।
৩) রামসেতুঃ- রামায়ণের গল্পগাথার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় গল্প হল রাম লেখা পাথর সমুদ্রে ভাসিয়ে তা দিয়ে লঙ্কায় প্রবেশের গল্প। আজকের দিনে রামসেতুই সেই ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে বলে মত অনেকের। রামসেতু নির্মিত হয়েছিল এমন এক পাথরে যা জলেও ভেসে থাকতে পারে। বানর সেনারা মাত্র ৫ দিনেই ৩০ কিমি লম্বা এই সেতু বানিয়ে ফেলেছিল। সাম্প্রতিক কালে রামসেতুর আশেপাশে এই ধরনের পাথরের সন্ধান মিলেছে যা জলের মধ্যে ভেসে থাকতে পারে।
৪) লঙ্কা জ্বলে যাওয়ার প্রমাণঃ- রামায়ণে রাম ভক্ত হনুমান নিজের লেজে আগুন জ্বালিয়ে সারা লঙ্কাদেশে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আজ ও শ্রীলঙ্কার কিছু অঞ্চলে পোড়া কালো মাটি দেখা যায় যার ফলে কিছু মানুষের ধারণা এই মাটিই রামায়ণের সত্যতাকে প্রমাণ করে।
৫) রাবণের চারটি হাওয়াই আড্ডাঃ- রামায়নে আমরা রাবণের হাওয়াই আড্ডার বিষয়ে জেনে থাকি। শ্রীলঙ্কায় রামায়ণ অনুসন্ধান কমিটি নয় বছর ধরে খোঁজাখুঁজি করে রাবণের এই চারটি আড্ডার সত্যতা প্রমাণ করেছে বলে দাবি করে। এগুলি হল আসানগোঁড়া, গুরুলোপোথা, তোতুপোলাকান্দা, বারিয়ালাপোলা।
৬) অশোকবনঃ- সীতাকে হরণ করার পর রাবণ তাকে অশোকবনে বন্দি করে রেখেছিল বলেই রামায়ণে বর্ণিত হয়েছে। এই অশোকবনের হদিসও মিলেছে বাস্তবে। এটি শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত এবং এখানে সীতা মায়ের মন্দিরও রয়েছে। এলিয়া পর্বত সংলগ্ন একটি জায়গায় সীতা দেবীকে রাখা হয়েছিল বলে জানা যায়।
৭) সঞ্জীবনী পাহাড়ঃ- রামায়ণে লক্ষণকে সারিয়ে তোলার উদ্দেশ্যে সঞ্জিবনী পাহাড় তুলে আনার ঘটনা বেশ জনপ্রিয়। তবে বর্তমানে এই পাহাড়কে শ্রীলঙ্কার রুমাসলা পর্বত নামে পরিচিত। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু জায়গায় এই পাহাড়ের টুকরো পড়েছিল বলে জানা যায় এবং আজও সেই সব স্থানে এমন কিছু জড়িবুটি জন্মায় যেগুলি অন্যান্যদের থেকে অনেক বেশি প্রসিদ্ধ।
৮) দিভুরামপুলাঃ- রামায়ণে সীতাকে উদ্ধারের পর রামচন্দ্র তাকে সতীত্বের প্রমাণ দিতে বলেছিল এবং এরপরেই সীতা দেবী অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিলেন। আজও সেই স্থানে গিয়ে মানুষ জীবনের অনেক কঠিন সিধান্ত নিয়ে থাকেন।
৯) হনুমানের পায়ের ছাপঃ- সীতাকে খোঁজার উদ্দেশ্যে হনুমান যখন লঙ্কায় গেছিলেন তখন তার বিভিন্ন স্থানে পায়ের ছাপ পড়েছিল। আজও শ্রীলঙ্কা, ভারত, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় এই পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়।
১০) কোনেশ্বরম মন্দিরঃ- রাবণ শিবের উপাসক ছিলেন এবং তিনি শিবের উপাসনা করার জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার কোনেশ্বরম মন্দিরে আজও শিবের পাশাপাশি রাবণের মুর্তি দেখতে পাওয়া যায়।
১১) পঞ্চবটিঃ- ভারতের নাসিকে অবস্থিত পঞ্চবটি বন রয়েছে যেখানে বনবাসের জন্য রাম, লক্ষণ এবং সীতা এসেছিলেন। এই পঞ্চবটিতেই লক্ষণ সূর্পনখার নাক কেটে দিয়েছিল বলে রামায়ণে কথিত আছে।
১২) জানকী মন্দিরঃ- নেপালের জনকপুরে অবস্থিত এই মন্দিরের সম্পর্কে বলা হয়, জনক কন্যা সীতাকে জানকী নামেও ডাকা হয় এবং সীতার জন্মস্থান জনকপুরেই ফলে এই মন্দির আসলে সীতার উদ্দেশ্যেই নির্মিত।
১৩) রামলিঙ্গমঃ- রাবণ বধের সময় রামচন্দ্রের হাতে এক ব্রাহ্মণের মৃত্যু হয়েছিল যার জন্য তিনি পশ্চাতাপ করেছিলেন। এই সময় ভগবান শিব রামচন্দ্রকে চারটি শিবলিঙ্গ নির্মানের কথা বলেছিলেন যার মধ্যে সীতা একটি হনুমান দুটি এবং রামচন্দ্র একটি বানিয়েছিলেন। রামচন্দ্র নির্মিত সেই শিবলিঙ্গ রামলিঙ্গম মন্দিরে আজও রয়েছে।
১৪) কোবরা হুড কেভঃ- রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় সবার প্রথমে এই গুহায় নিয়ে রেখেছিল বলে জানা যায়। গুহার ভিতরে অঙ্কিত গুহাচিত্র এই ঘটনার সত্যতা বহন করে চলেছে।