সুজিত বসু,কলকাতার এক প্রাইভেট কোম্পানি তে নুন্যতম সেলারির চাকুরী। ব্যাংক ব্যাল্যান্স কিছুই জমে না, সংসার শুধু চলে যায়।মধ্যবিত্ত পরিবার, একমাত্র ছেলে আকাশ ক্লাস ওয়ান এ পড়ে। সুজিত বাবু গত ৩ মাস অফিস যায় না।কারন সুজিত বাবুর বর্তমান ঠিকানা কলকাতা টাটা ক্যানসার হসপিটাল।কারন টা নিশ্চয় আর বলার দরকার পরে না, হ্যাঁ প্রায় লাস্ট স্টেজ অফ ক্যানসার।
ছোট্ট ছেলে আকাশ ক্যানসার রোগের মানেও বোঝে না,তবে এটা শুনেছে বাবা বেশিদিন বাঁচবে না। গার্গী বসু, সুজিত বাবুর স্ত্রী, দেখতে সুশ্রী,পড়াশুনায় উচ্চমাধ্যমিক পাশ ।স্বামীর এই রোগের কারনে অনেকের কাছেই হাত পেতেছেন, সাহায্যও পেয়েছেন,পাড়ার ক্লাব থেকেও কিছু টাকা জোগাড় করে গার্গী দেবীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে যত দিন ঘনাতে থাকে, সাহায্যর হাতও কমতে থাকে।এই ভাবেই চলে গেলো ৩ মাস, ডক্টর আশা দেয় তবে সেই খরচ ধারাবাহিক চালানোর ক্ষমতা গার্গী দেবীর নেই। নিরুপায় গার্গী দেবী স্বামী কে মৃত্যুর মুখে ঠেলেও দিতে পারে না, আবার পারেও না স্বামী কে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে।তবু ভালোবাসার শেষ চেষ্টা ।
হ্যাঁ, ইদানিং গার্গী দেবীর বর্তমান ঠিকানা সোনাগাছি,কলকাতা আর নাম পরিবর্তন করে হয়েছেন গীতা বৌদি। সম্মানের উপাধি পেয়েছেন ‘বেশ্যা’ ।অপমান আসে,অত্যাচার আসে,মনে অপরাধী ভাব আসে, তবে হ্যাঁ এখন পয়সা টাও আসে নিয়ম করে।স্বামী কে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা, নিজের ভালোবাসা কে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা।বেহুলা তার স্বামীর প্রান বাঁচানোর জন্য স্বর্গে গিয়েছিলেন, দেবতা দের কাছে নেচে খুশি করেছিলেন দেবতা দের।
আর আজকের গীতা বৌদি স্বামীর প্রান বাঁচানোর জন্য নরকে গেছেন, সমাজের তথাকথিত বাবু দের খুশি করছেন শুধুমাত্র পয়সার জন্য। হোক না সমাজের কাছে গীতা বৌদি বেশ্যা, তবু সুজিত বাবুর কাছে বেহুলার চেয়ে কম না।জানি না, সুজিত বাবু বাঁচবে কিনা, তবে এটা ঠিক সুজিত বাবু কোনোদিন জানবে না তার স্ত্রীর আত্মত্যাগের কথা ।
(গল্পে সমস্ত চরিত্র ও ঘটনা কাল্পনিক, শুধুমাত্র সমাজের তথাকথিত ‘বেশ্যা’ ট্যাগ সম্পন্ন মেয়েদের আত্মত্যাগের বিষয় কে তুলে ধরা হয়েছে গল্পের মাধ্যমে)
(লেখা – সৌরভ দত্ত)