(পর্ব- ১)
রাত বারোটা, একা পথ শুনশান! একটি মেয়ে কনের সাজে, ফাঁকা রাস্তায় কোনো এক গাড়ির অপেক্ষায়। ঠিক সেই সময়ই কোনো এক বিয়ে বাড়ি নিমন্ত্রন্ন খেয়ে ফিরছিল তুষার। হঠাৎ রাস্তায় কোনো এক সুসজ্জিতা অষ্টাদশীকে লিফ্ট চাইতে দেখে ঘ্যাঁচ করে ব্রেক দিতেই হল তাকে।
“কোথায় যাবেন” – তুষার জিজ্ঞাসা করল মেয়েটিকে। মেয়েটি কোনো উত্তর দিল না।
“বুঝেছি, উঠে আসুন” তুষারের কথায় মেয়েটি উঠে বসল তার ব্যাকসিটে।
তারপর বাইক স্টার্ট করতেই মেয়েটি একপ্রকার খামচেই ধরল তুষারের জামাটা। তুষার বলল- “কোনো ভয় নেই!”
বেশ কিছুটা পথ চলার পর তুষার বলল- “বাড়ি থেকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল বুঝি?” মেয়েটি ঘার নাড়ল।
অন্ধকার রাস্তায় মাঝে মাঝে একটি ল্যাম্পপোস্টের আলোয় সামনের মিররে তুষার দেখতে পাচ্ছিল মেয়েটির এক মাথা ঘোমটা, এবং সারা গা-য়ে গহনা। হঠাৎ একটি লরি পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পর হাওয়া এসে মেয়েটির ঘোমটা সরিয়ে দেয়। সেই অপূর্ব রূপ তুষার এর আগে কখনো দেখেনি। হবে নাই বা কেন? এ তো নিখুঁত। কিন্তু তাকে এরকম একটি শুভদিনে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েই বা আসতে হল কেন?
তুষার মেয়েটিকে বলল “কোথায় যাবেন? ইয়ে মানে আপনাকে কোথায় নামাবো?” মেয়েটি কোনো উত্তর দিল না, শুধু ঘার নাড়ল। তুষার বলল- “আমার বাড়ি চলে এসেছে, আজ রাত্তির টা আপনি বরং আমার বাড়িতেই থাকুন না হয়?” মেয়েটি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানাল।
তুষার ফ্ল্যাটে একাই থাকে। তুষারের পরিবার থাকে ভুবনেশ্বরে। চাকরি সূত্রে তুষার আজ কলকাতায়। ঘরে ঢুকে তুষার একটি গ্লাসে জল এনে মেয়েটিকে দিল তারপর বলল “ওয়াশরুমটা ওদিকে, আপনি ফ্রেস হয়ে নিন। আমি আজ ডাইনিং-এ শুয়ে পড়ছি। আপনি এই ঘরেই শুয়ে পড়ুন। সকালে উঠে কোনো ব্যবস্থা করা যাবে না হয়।” মেয়েটি আবার ঘাড় নাড়ল।
দরজাটা বাইরে থেকে ভেজিয়ে দিয়ে তুষার চলে গেল।
রাতে শুয়ে শুয়ে তুষার সারাটা রাত শুধু মেয়েটারই কথা ভেবেছে। বাইকের মিররে ব্যাটসিটে দেখা অপূর্ব সেই রূপ সত্যিই প্রেমে ফেলারই মতন। তবে কি আমি ওর প্রেমে পড়লাম? এই যাঃ কিসব ভাবছি! কে না কে, চিনি না জানি না। মনে মনে ভেবে একটু লজ্জার হাসিই হাসল তুষার।
মাঝরাতে হঠাৎ ভীষণ ঝড় উঠল, ঘরের জানলা গুলো শব্দ করে বন্ধ হচ্ছিল আবার হাওয়ায় খুলে যাচ্ছিল। তুষার উঠে মেয়েটির রূমে আসে এবং ঘরের জানলাগুলো বন্ধ করে দেয়। মেয়েটি তখন ঘুমোচ্ছে। তুষার কাছে গিয়ে চাদরটা টেনে দেয়। বেশ খানিকক্ষন ঘুমন্ত মেয়েটির দিকে চেয়ে রইল তুষার। এ দৃষ্টি প্রেমের, এই চাহনি স্নিগ্ধতার।
সকাল অবদি ঘুমোতে পারল না তুষার। সারারাত ধরে বাইরে সোফাতে শুয়ে শুয়ে শুধু মেয়েটার কথাই ভাবছিল সে। এক একবার এটাও ভাবছিল তাকে যে ভালো লেগে গেছে সে কথা জানায়। পরক্ষনেই লজ্জায় সংকোচে পিছিয়ে যাচ্ছিল সে। মেয়েটির নামও সে জানে না। কোথায় বাড়ি, কি তার ব্যাকগ্রাউন্ড কিছুই জানে না তুষার, কাছে কিছুই নেই, আছে শুধু এক দেখাতে প্রেমে পড়ে যাওয়ার অনুভূতি।
যা হবে হোক, সকাল হতেই মেয়েটিকে বলবে বলে ভেবেই নিয়েছিল। একটা নতুন প্রসেস ঠিক করেছিল সে, ভেবেছিল ভালোবাসার তিনটি শব্দ ঘুমন্ত পরীর বালিশের নিচে রেখে সে কাজে চলে যাবে। খুব ভয় করছিল তুষারের, রিজেক্ট হওয়ার ভয়, যদি না করে দেয়। শুধুমাত্র একটু আশ্রয়দানের সাহায্যে মেয়েটি কেনই বা তাকে স্বীকার করবে। কিন্তু সকাল হতেই সাহসের ওপর ভর করে সেই ঘরের দরজা খুলল।
দরজা খুলেই তুষার যেন আকাশ থেকে পড়ল। ঘরে কেউ নেই, বিছানাটাও কি ভীষণ পরিষ্কার, একটু চাদরও কোঁচকায়নি। সামনের দেওয়ালে লিপস্টিক দিয়ে লেখা- “ভোরের আলো ফুটলে আমি আর শরীর ধারন করে রাখতে পারি না, আবার আসব।”
To be Continue…